বড় ঐক্যের পথে সংগীতশিল্পীরা
শিল্পীদের নৈতিক ও আর্থিক অধিকার সংরক্ষণ এবং সংগীতাঙ্গনের সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়নের প্রত্যয়ে যাত্রা করল কণ্ঠশিল্পীদের নতুন সংগঠন কণ্ঠশিল্পী পরিষদ বাংলাদেশ। রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে আহ্বায়ক এবং আধুনিক গানের শিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ ও হাসান আবিদুর রেজা জুয়েলকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে গতকাল মঙ্গলবার এ সংগঠনটি আত্মপ্রকাশ করে।
কণ্ঠশিল্পী পরিষদের উপদেষ্টারা হলেন সৈয়দ আবদুল হাদী, নিয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরী, খুরশীদ আলম, ইন্দ্রমোহন রাজবংশী, রফিকুল আলম, ফকির আলমগীর, লিনু বিল্লাহ, শাহীন সামাদ, পাপিয়া সারোয়ার, ফেরদৌস আরা, তপন মাহমুদ, ফাতেমা তুজ জোহরা, আবিদা সুলতানা ও ইয়াকুব আলী খান।
সংগঠনের আত্মপ্রকাশ প্রসঙ্গে আহ্বায়ক রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা বলেন, বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ৫০ বছরেও অবহেলিত সংগীতাঙ্গনের কোনো সুষ্ঠু নীতিমালা করা যায়নি। অথচ সংস্কৃতির অন্য প্রায় সব শাখার রয়েছে শক্তিশালী সংগঠন। তারা সাংগঠনিকভাবে নিজেদের দাবিদাওয়া আদায় করতে পারে। আজ কণ্ঠশিল্পী পরিষদ বাংলাদেশ গঠনের মাধ্যমে সংগীতাঙ্গনের এক বৃহৎ ঐক্যের দুয়ার খুলে গেল।
যুগ্ম আহ্বায়ক কুমার বিশ্বজিৎ বলেন, ‘এ কথা সত্য যে আমাদের শিল্পীরা সৃষ্টিতেই মগ্ন ছিলেন। কখনোই অর্থের পেছনে ছোটেননি। কিন্তু তাঁদের সৃষ্টির ফল দীর্ঘদিন ধরে চলে যাচ্ছে অন্যের ঘরে। এটা বন্ধ করতে ঐক্যের প্রয়োজন। শিল্পীরা তাঁদের সৃষ্টিকে অবলম্বন করেই স্বাবলম্বী হতে চান। সেই স্বপ্নকে সামনে রেখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী দেশের অগ্রজ ও তরুণ প্রগতিশীল কণ্ঠশিল্পীদের সংগঠিত করে সুচিন্তিত মতামতের ভিত্তিতে আমরা সিঙ্গারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ গঠন করেছি।’
এ সংগঠন শিল্পীদের অধিকার রক্ষায় কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে, জানতে চাইলে কপিরাইট রেজিস্ট্রার জাফর রাজা চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এত দিন এ রকম সংগঠন না থাকায় শিল্পীরা একাই নিজেদের অধিকার রক্ষায় লড়েছেন। সংগঠিত হওয়ায় এখন তাঁদের জন্য কাজটি আরও সহজ হয়ে যাবে। এই সংগঠন শিল্পীদের মেধাস্বত্বাধিকার রক্ষায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি। এতে শিল্পীরা আর দুস্থ শিল্পী বলে গণ্য হবেন না।’
যোগাযোগ করলে সংগঠনটির উপদেষ্টা সৈয়দ আবদুল হাদীর ভিন্নমত মিলল। জ্যেষ্ঠ এ শিল্পী জানান, এ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হতে তিনি কিছু শর্ত দিয়েছিলেন। তাঁর সেসব শর্ত পূরণ করা হয়নি। তিনি বলেন, ‘তাঁরা আমাকে নতুন এ সংগঠনের সঙ্গে থাকার প্রস্তাব দিলে আমি কিছু শর্ত দিয়েছিলাম। কারণ, আমার সংগঠন করার অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। তাঁরা আমার শর্তগুলো পূরণ না করেই উপদেষ্টা হিসেবে আমার নাম যুক্ত করেছে, ঠিক আছে। তাঁদের জন্য শুভেচ্ছা থাকবে। যদি তাঁরা ভালো কিছু করতে পারেন, আমি সাধ্যমতো তাঁদের সাহায্য করব।’
সংগীতাঙ্গনে দুই মাস ধরে চলছে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রয়াস। এরই মধ্যে গীতিকার, সুরকার ও যন্ত্রশিল্পীদের কপিরাইটসহ নৈতিক ও আর্থিক অধিকার সুরক্ষায় আরও কয়েকটি সংগঠন আত্মপ্রকাশ করেছে। সেগুলোর মধ্য রয়েছে গীতিকবি সংঘ ও মিউজিক কম্পোজারস অ্যাসোসিয়েশন। ধারণা করা হচ্ছে, এ সংগঠনগুলো মিলে একটি বৃহৎ মোর্চা গঠনের মাধ্যমে নিজেদের অধিকার রক্ষায় অগ্রসর হবেন শিল্পীরা।
উল্লেখ্য সত্তরের দশকের শুরুর দিকে কণ্ঠশিল্পী সংস্থা নামে কণ্ঠশিল্পীদের নিয়ে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা হয়। ইস্কাটনে সংগঠনটির ক্লাবে শিল্পীদের জন্য ছিল গানবাজনা, সেমিনার, কর্মশালা, খেলাধুলাসহ নানা সুবিধা। সেই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদুল হাদী বলেন, ‘নিজের ক্যারিয়ারের ক্ষতি করে পাঁচ বছর সংগঠনটি চালিয়েছিলাম। পরে তরুণদের হাল ধরার আহ্বান জানালে কেউ সাড়া দেননি। তাঁদের অনেকে বিদেশে চলে যাওয়ায় সংগঠটি চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে সংগঠনটির স্বাভাবিক মৃত্যু ঘটে। সংগঠনটি চালানোর অভিজ্ঞতা আমার জন্য সুখকর ছিল না।’