নিরপেক্ষতায় এগিয়ে আমরা...

রবিবার, ডিসেম্বর ১৫, ২০২৪

স্বর্ণের বাজারে অস্থিরতা

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর ২৬ সেপ্টেম্বর,২০২০

বিশ্ববাজারের পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বর্ণের বাজারেও এক ধরনের অস্থিরতা লক্ষ করা যাচ্ছে। কখনো স্বর্ণের দাম কমছে আবার কিছুদিনের মধ্যেই তা বাড়ছে।  তিন দফা বাড়ার পর গত বৃহস্পতিবার দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমানো হয়েছে। বাজার বিশ্লেষকরা বলেছেন, ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক সুদের হার কমানোয় এবং নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্র ডলার শক্তিশালী করার চেষ্টা করায় বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দরপতন হচ্ছে।

তারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-চীন দৌরাত্ম্যের কারণে স্বর্ণের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। ডলারের পতন এবং স্বর্ণের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার পেছনে চীনের হাত ছিল। এখন নির্বাচনের আগে ট্রাম্প ডলার শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এর সঙ্গে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক সুদের হার কমিয়েছে। আবার অস্বাভাবিক দাম বাড়ার কারণে কিছু জুয়াড়ি স্বর্ণ বিক্রির চাপ বাড়িয়েছে। স্বর্ণ বিক্রি করে তাদের একটি অংশ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছেন। এ সবকিছু মিলে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম কমেছে।

তারা বলছেন, স্বর্ণের বাজার এখন অনেকটাই জুয়ার আখড়ায় পরিণত হয়েছে। স্বর্ণের দাম কখন কোন দিকে যাচ্ছে, কোনো ধারণা করা যাচ্ছে না। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্বর্ণের প্রকৃত ব্যবসায়ীরা। একদিকে দেশের বাজারে স্বর্ণের অলঙ্কারের ক্রেতা নেই, অন্যদিকে বাড়তি দামে স্বর্ণ কেনার পর দাম কমায় লোকসানের মুখে পড়ছেন ব্যবসায়ীদের।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, মহামারী করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রকোপের পর চলতি বছরের শুরু থেকে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম অস্বাভাবিক বাড়ার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। দফায় দফায় দাম বেড়ে আগস্টের শুরুতে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম রেকর্ড দুই হাজার ৭৫ ডলারে ওঠে।

বিশ্ববাজারে অস্বাভাবিক দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৬ আগস্ট দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়। ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম রেকর্ড ৭৭ হাজার ২১৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া ২১ ক্যারেটের স্বর্ণ ৭৪ হাজার ৬৬ টাকা, ১৮ ক্যারেটের স্বর্ণ ৬৫ হাজার ৩১৮ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণ ৫৪ হাজার ৯৯৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

তবে এদাম বাড়ার পর গত ৭ আগস্ট পতনের মুখে পড়ে স্বর্ণ। ১১ আগস্ট একদিনে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১১২ ডলার পর্যন্ত কমে যায়। এরপরও চলতে থাকে স্বর্ণের দরপতন। ফলে বাংলাদেশেও কয়েক দফায় স্বর্ণের দাম কমানো হয়। অবশ্য বিশ্ববাজারে দাম না বাড়ার পরও চলতি মাসে দুদফা দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়।

এর মধ্যে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দরপতন চলতে থাকে। দফায় দফায় দাম কমে এখন প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১৮৬৮ ডলারে নেমে এসেছে। বিশ্ববাজারে দরপতনের প্রেক্ষিত গত বৃহস্পতিবার দেশের বাজারে আবার স্বর্ণের দাম কমিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।

নতুন দাম অনুযায়ী, ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম দুই হাজার ৪৪৯ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৪ হাজার ৮ টাকা। এছাড়া ২১ ক্যারেটের স্বর্ণ ভরি ৭০ হাজার ৮৫৯ টাকা, ১৮ ক্যারেটের স্বর্ণ ভরি ৬২ হাজার ১১১ টাকা ও সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণ ৫১ হাজার ৭৮৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিশ্ববাজার ও দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমার কারণ হিসেবে বাজুসের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক সুদের হার কমিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের আগে ট্রাম্প ডলার শক্তিশালী করার চেষ্টা করছেন। বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম কমার এটিই অন্যতম কারণ। আর বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম কমার কারণে বাংলাদেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমানো হয়েছে। আমরা সবসময় আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে আপডেট থাকতে চাই। যদি বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম আরো কমে, তবে আমরা দাম কমাবো। তবে এখন (শুক্রবার দুপুর ১২টায়) বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১৮৬৮ ডলারে আছে। এই দাম থাকলে নতুন করে আমাদের দাম বাড়ানো বা কমানোর প্রয়োজন হবে না।

ভেনাস জুয়েলার্সের কর্ণধার ও স্বর্ণশিল্প সমিতির সভাপতি গঙ্গা চরণ মালাকার বলেন, বর্তমানে আমাদের বাজারে স্বর্ণের যে দাম আছে, তা বিশ্ববাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম কমার কারণে আমাদের বাজারেও স্বর্ণের দাম কমানো হয়েছে। এতে আমরা স্বর্ণের অলঙ্কার ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েছি। কারণ বেশি দামে স্বর্ণ কিনে এখন আমাদের কম দামে স্বর্ণ বিক্রি করতে হবে।

তিনি বলেন, স্বর্ণের অলঙ্কার যারা কিনেন তারা দোকানে আসছেন না। উল্টো দাম বাড়ার কারণে মানুষ আমাদের কাছে স্বর্ণ বিক্রি করে দিয়েছে। এখন স্বর্ণের দাম কমলেও আগের মতো ক্রেতা নেই। অথচ প্রতিমাসে কর্মীদের বেতন পরিশোধ করতে হচ্ছে। দোকান ভাড়া দিতে হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে আমরা বেকায়দায় আছি। করোনার শুরুর দিকে আন্তর্জাতিক শেয়ারবাজারে দরপতনের কারণে শেয়ারবাজারের গেম্বলাররা (জুয়াড়ি) স্বর্ণ কিনে মজুত করে। এদের একটি অংশ বাড়তি দামে স্বর্ণ বিক্রির চাপ বাড়িয়েছে। স্বর্ণের দাম কমার এটি একটি কারণ।

বাজুসের সাবেক সভাপতি ওয়াদুদ ভূইয়া বলেন, স্বর্ণের বাজার এখন একপ্রকার জুয়ার আখড়ায় পরিণত হয়েছে। জুয়াড়িরা এখন স্বর্ণ নিয়ে খেলা করছে। স্বর্ণের দাম কখন কোন দিকে যাচ্ছে কোনো ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না। এর শিকার হচ্ছে আমাদের মতো ব্যবসায়ীরা। এই অস্থিরতার মধ্যে ব্যবসা করে আমরা শান্তি পাচ্ছি না। বাড়তি দামে স্বর্ণ কেনার পর আড়াই হাজার টাকা দাম কমে গেল। এখন এই লোকসানটা আমাদের বহন করতে হচ্ছে। আমাদের দেশে স্বর্ণের দাম বাড়া বা কমা নির্ভর করে বিশ্ববাজারের ওপর। বিশ্ববাজারে দাম বাড়লে আমাদের বাজারে দাম বাড়াতে হবে। আবার বিশ্ববাজারে দাম কমলে দাম কমাতে হবে। এখানে আমাদের কারো কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।

tags

মন্তব্য

মন্তব্য করতে লগইন করুন অথবা নিবন্ধন করুন

সব খবর